• kalam_highschool@yahoo.com
  • |
  • ০১৭৬৮ ৯২৩৪৬১

About-us

"গ্রাম দেখতো কলম, আর বিল দেখতো চলন" প্রবাদ বাক্যটি বহু দিনের। প্রায় দুইশত বছর আগে হান্টার সাহেবের গেজেটে কলম গ্রামের নাম উল্লেখ আছে। আত্রাই ও পুড়নাই নদীর পলল পরে বিধৌত ছায়া-ঢাকা, পাখি-ঢাকা কলন গ্রামের নাম নিয়ে নানা কথা প্রচলিত আছে। জনশ্রুতি আছে, এক রাজ পরিবার এই অঞ্চল দিয়ে নৌকায় ভ্রমণ করছিলেন। সে সময় তাদের একটি সোনার কলম কন্যার পানিতে পরে যায়, সেই 'সোনার কলম হারিয়ে যাওয়া স্থান' হিসেবে এলাকাটি 'কলম' নামে পরিচিতি লাভ করে এবং একসময় গ্রামটির নামই হয়ে যায় 'কলম'। আরও শোনা যায় তখন প্রাকৃতিক ভাবে এই এলাকায় এক প্রকার ধান হতো যার নাম ছিল 'কলম ধান'। 'কলম' বড় গ্রামের নামকরণের পিছনে এ ধানেরও হয়তো অবদান ছিল। স্বদেশী আন্দোলনের বিপ্লবীরা একধারে চলন বিল অন্য যারে দুইটি ননীর মাঝখানে অবস্থিত এই গ্রামটিকে তাঁদের আত্মগোপনের নিরাপদ স্থান হিসেবে পছন্দ করেন। সেই সময় ময়মনসিংহের রাজা ত্রৈলফনাম এবং পাবনার আদুল মতিন এই কলমে আত্মগোপনে থেকে বৃটিশ বিরোধী আন্দোলন করেছেন। তাঁরা এখানে তাঁত কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন এবং লোকজনকে প্রশিক্ষণ দেন। লেখা পড়া শেখার তালিম দেন। কালক্রমে প্রথমিক বিদ্যালয় সরকারি ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়। নিম্ন প্রাইমারী ২য় শ্রেণি পর্যন্ত এবং উচ্চ প্রাইমারী ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ কার্যক্রম পরিচালিত হয় দত্তদের গোলায় প্রতিষ্ঠিত 'কলম গোলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে'। গ্রামটি গড়ে উঠেছিল বাণিজ্যিক ভিলেজ হিসেবে। বীরভূম, বাঁকুড়া, হুগলী প্রকৃতি অঞ্চল থেকে বগী দস্যুদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শত শত কংস বনিক এসে এই গ্রামে বসতি স্থাপন করে। যার ফলে কলাম কাঁসাশিল্পে বিখ্যাত হয়ে ওঠে। মৎস ভান্ডারখ্যাত চলন বিল এবং আত্রাই গুড়নাই নদীর কল্যাণে এখানকার জনগোষ্ঠীর এক বড় অংশ ছিল মৎসজীবী সম্প্রদায়। আরো একটি অংশ ছিল মৃৎশিল্পী বা কুমার সম্প্রদায়। মাটির হাঁড়ি, পাতিল, কলস, চাড়ি ইত্যাদিও ছিল কলমের ঐতিহ্য। বিলের পলি মাটির কারণে কৃষিজমি ছিল অতি উর্বর; ধান, পাট, গম, আখ, মশুর, খেসারি ইত্যাদি ছিল এখান কৃষিপণ্য। অধিবাসীরা সাধারণত পেশাভিত্তিক পাড়ায় বিভক্ত ছিল। কৃষিজীবী, মৎস্যজীবী, ক্ষৌরকর্মী, কামার, কুমার, দুগ্ধব্যবসায়ী, কাঁসা ব্যবসায়ী প্রভৃতি। কলম বাজার ছিল একটি প্রথম শ্রেণীর বাজার। ব্যাবসায়ীর কলম থেকে বড় বড় নৌকা বোঝাই করে ধান, পাট, কাঁসা, পিতল ও মৃৎপন্য সামগ্রী নিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেত। কলম গ্রামের অধিবাসীরা ব্যবসা বাণিজ্য ও অন্যান্য সুকুমার বৃত্তিতে অনেক এগিয়ে থাকায় শিক্ষায় ছিল পিছিয়ে। তাই শিক্ষায় অনগ্রসর এই জনগোষ্ঠীর জন্য কলমের জমিদার মহামতি হেরম্বনাথ ভট্রাচার্য্য মহাশয় এখানে একটি উচ্চ বিদ্যালয় প্র্তিষ্ঠার পরিকল্পনা করেন। তাঁর আন্তরিক প্রচেষ্টা ও অক্লান্ত পরিশ্রমে ১৯২৪ সালে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেট কর্তৃক কলম উচ্চে বিদ্যালয় অনুমোদন লাভ করে। প্রচলিত আছে যে, কলম উচ্চ বিদ্যালয় পরিদর্শনে কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পরিদর্শক আসলে হেরম্বনাথ ভট্রাচার্য্য মহাশয়ের স্ত্রী তাঁকে ৮২ প্রকারের ব্যঞ্জন দিয়ে আপ্যায়ন করেছিলেন। তখনকার মানুষ জায়গীর রাখতে তেমন চাইত না তাই যারা থাকার জায়গা পেত না জাতি ধর্ম নির্বিশেষে ৩০-৪০ জন ছাত্র স্কুলের প্রতিষ্ঠাতার বাড়িতে থাকতো। জমিদার বাবুর নিজস্ব ব্যয়ে রান্না হত এবং ঘন্টা বাজিয়ে তাদরে খেতে দেওয়ার ব্যবস্থা করতেন। অনেক শিক্ষক মাসের পর মাস বেতন পাননি।বাহিরের শিক্ষকরা এক সময় চলেও গেছেন, তবে স্থানীয় শিক্ষকরা মাটি কামড়ে পড়েছিলেন। ১৯৬০ সালের পর থেকে ছাত্র সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।ইতিমধ্যেই পাবনা, মানিকগঞ্জ, ময়মনসিংহ প্রভৃতি অঞ্চল থেকে কপালি সম্প্রদায় কলম গ্রামের আশে পাশের ফাঁকা গ্রামগুলোতে বসতি স্থাপন করে।তারা কৃষিকাজে সুনিপুণ ছিল এবং লেখাপড়ায়ও আগ্রহী ছিল। অতঃপর যমুনা নদীর ভাঙ্গন এবং চর অঞ্চল থেকেও হিন্দু মুসলিম অনেকেই এখানে বসতি স্থাপন করে। আগের বনজঙ্গল পরিষ্কার হয়ে যায় এবং নতুন নতুন বসতি স্থাপিত হয়। ফলে ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পেতে থাকে। ১৯৬২ সালে জনাব বদিউজ্জামান সাহেব কলম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হয়ে আসেন। তিনি নানাভাবে বিদ্যালয়ের উন্নয়নে ব্রতী হন।এস. এম মুনছুর আলী সাহেবের বাবা এছার র মাস্টারের তথ্য হতে পাওয়া যায়, ১৯৩৭ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় শতভাগ পাশ এবং শতভাগই প্রথম বিভাগে উত্তীণ হয়। ১৯৮৬ - বিদ্যালয়ের ছাত্র-ছাত্রী সংখ্যা ১২০০ তে উন্নীত হয় এবং কলম য় কলম গ্রামের গৌরবে পরিণত হয়। ৭০ এর দশক থেকে নানা → মেধাবী ছাত্ররা আসতে থাকে। কলম উচ্চ বিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রথম বিভাগ পাওয়ার রেকর্ড ৮৯ জন এবং ৩ জন রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডের সম্মিলিত মেধা তালিকায় স্থান করে নেন। যারা মেধা তালিকায় ছিলেন- ১৯৭১ সাল মোঃ হায়দার রশিদ ১৭ তম, ১৯৭৪ মোঃ জশমত উল্যাহ ৬ষ্ঠ ও ১৯৯৫ সালে মোঃ নাজমুল হোসাইন ১৭তম এছাড়াও এসএসসিতে সর্বোচ্চ পাশ, সর্বোচ্চ প্রথম বিভাগসহ সর্বোচ্চ নাম্বার প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর তালিকায় 'কলম উচ্চ বিদ্যালয়' সমগ্র নাটোর জেলার মধ্যে শীর্ষস্থান দখল করেছে অসংখ্য বার। কলম গ্রামে আগের দিনে সাংস্কৃতিক অঙ্গন মুখরিত করে রাখতো। উদয় সংঘ, বণিক অপেরা, চাষী ক্লাব, মধুমিতা সংঘ থিয়েটার ও যাত্রা করত। রবীন্দ্র, নজরুল জায়ন্তী উপলক্ষ্যে বিচিত্রানুষ্ঠান হত। কলম উচ্চ বিদ্যালয়েও বিচিত্রানুষ্ঠান হত। এছাড়াও বাইরে থেকেও যাত্রা দল আসৎ। কলম উচ্চ বিদ্যালয়ের আবু বক্কর সিদ্দিক প্রথম বিভাগীয় পর্যায়ে আবৃতি করতে যায়, তাছাড়া জেলা পর্যায়ে অনেক ছেলেমেয়েই নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়েছে। থানা পর্যায়ের বিতর্ক, উপস্থিত বক্তৃতা, মুখাভিনয় ইত্যাদিতে প্রতি বছরই সাফল্যের স্বাক্ষর রাখে। খেলাধুলায় এ গ্রাম এবং বিদ্যালয় চিরদিনই উন্নত। ফুটবল, ক্রিকেট, ভলিবল, ব্যাডমিন্টন এসব খেলার চর্চা নিয়মিত হয়ে থাকে। ১৯৬০ কলম উচ্চ বিদ্যালয় রাজশাহীতে জেলা পর্যায়ে ফুট অংশগ্রহণ করে। বিদ্যালয়ের গেম ফান্ডে টাকা অপ্রতুল ছিল। বাবু হেরম্বনাথ ভট্রাচার্য্য তাঁর স্ত্রীর গহনা বন্ধক রেখে টাকা নিয়ে ছেলেদেরকে বলেছিলেন,” যাও তোমরা খেলে এসো"। তাঁর স্ত্রী তাঁকে সর্বকর্মে ছায়াসঙ্গী হিসেবে সাহায্য করতেন, ৩০-৪০ জন ছাত্রের রান্না করতেন। বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে অশিক্ষিত লোকেরা তাঁকে নিরুৎসাহিত করতেন। কিন্তু তাঁর সান্তনা গৃহেই। আমাদের জাঁতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ভাষায় “কোন দিনও একা হয়নিক জয়ী পুরুষের তরবারি শক্তি দিয়েছে, প্রেরনা দিয়েছে বিজয়লক্ষী নারী” এছাড়া অ্যাথলেটিক এ প্রথম জাতীয় পর্যায়ে লং জাম্পে অংশ নেয় মোঃ আব্দুল জালাল। তার পর জাতীয় পর্যায়ে দৌড়ে অংশ গ্রহণ করে আবু জুবায়ের (বাবু) এবং মোস্তাফিজুর রহমান। থানা এবং জেলা পর্যায়ে প্রতি বছরই ছেলেমেয়েরা প্রচুর সাফল্য অর্জন করে। কলম গ্রামের অবস্থান নাটোর জেলার সিংড়া উপজে্লার অন্তর্গত ৪নং কলম ইউনিয়নের অধীন। আমরা কলম উচ্চ বিদ্যলয়ের সর্বাংগীন কল্যাণ কামনা করি। কলম উচ্চ বিদ্যালয় হল একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যা কলম, সিংড়া, নাটোরে অবস্থিত। এর এডুকেশানাল ইনস্টিটিউট আইডেন্টিফিকেশন নম্বর EIIN 124255, 02 জানুয়ারী, 1924 সালে, এটি প্রথম চালু করা হয়েছিল। এটি একটি সম্মিলিত ধরণের সহ-শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম। প্রতিষ্ঠানটি নিম্নলিখিত Science, Business Studies, Humanitiesশিক্ষা প্রদান করে। এর এমপিও নম্বর 8408041301, দিবা শাখায় শিক্ষা প্রদান করে থাকে। এটির ব্যবস্থাপনা পরিচালনা কমিটির মাধ্যমে এটি পরচালিত। এটির স্বীকৃতি সরকার দ্বারা স্বীকৃত এবং স্বীকৃতি স্তরটি মাধ্যমিক রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড।

Share On: